• মোদীর সভায় ভিড়ে হুলস্থুল
    আনন্দবাজার | ২৮ এপ্রিল ২০২৪
  • চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা প্লাস্টিকের চেয়ার। লাইন করে বেরিয়ে যাচ্ছেন মানুষ। কানে ফোন গুঁজে মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা চেয়ারের টুকরো সরাচ্ছেন হবিবপুরের ঋষিপুরের বাসিন্দা লীলা মণ্ডল। কী খুঁজছেন? লীলা বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মঞ্চ উঠে বক্তৃতা শুরু হতেই ব্যারিকেড ভেঙে এক দল পুরুষ হুড়োহুড়ি করে মহিলাদের আসনের দিকে চলে আসেন। হুড়োহুড়ির সময় সোনার নাকছাবি খুলে যায়। সেটাই খুঁজছি। ছেলে, স্বামীকেও খুঁজে পাচ্ছি না।’’ নাকছাবি না পেলেও, ছেলে, স্বামীকে খুঁজে পান তিনি।

    শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় এমনই বিশৃঙ্খলার ছবি দেখা গেল পুরাতন মালদহের সাহাপুরের নিত্যানন্দপুর মাঠে। বেলা ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। তবে সকাল ৮টা থেকেই সভাস্থলে জমায়েত হতে শুরু করেন কর্মী, সমর্থকেরা। মঞ্চের এক পাশে মহিলা এবং অপর প্রান্তে পুরুষদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেউ রাম, কেউ হনুমানের সাজে সভাস্থলে হাজির হন। তাঁদের সঙ্গে নিজস্বী তোলারও হিড়িক পড়ে যায়। সভাস্থলের পাশের আম বাগান কার্যত ‘মেলার’ রূপ নেয়। খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা।

    তবে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠতেই ‘মোদী, মোদী’ চিৎকার করতে শুরু করে দেন কর্মী, সমর্থকেরা। মোদী বক্তৃতা শুরু করতেই সে চিৎকার আরও বেড়ে যায়। তাঁদের ‘উৎসাহ’, ‘উদ্দীপনা’ থামাতে আসরে নামেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তিনি কিছুক্ষণের জন্য বক্তৃতা থামিয়ে দেন। পরে বলেন, “যত মানুষের ভিড় হয়েছে। মাঠ ছোট পড়ে গিয়েছে। আমাদের আয়োজন কম পড়ে গিয়েছে। মাঠের মতো হেলিপ্যাডেও প্রচুর মানুষ আছেন। মানুষের ভালবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত।’’

    প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করলেও চিৎকার কমেনি। উল্টে ব্যারিকেড ভেঙে পিছন থেকে কর্মী, সমর্থকেরা সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। ফলে, সামনের সারিতে থাকা বিজেপির মহিলা কর্মী, সমর্থকেরা অস্বস্তিতে পড়েন। বিপাকে পড়ে সভাস্থলে হাজির শিশু, কিশোররা। শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। মহিলা কর্মী মিনতি কর্মকার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সভায় ভিড় হবে জানতাম। ভিড়ের জন্য অস্বস্তিতে পড়তে হবে ভাবতে পারেনি। মহিলাদের ধাক্কাধাক্কি করা হয়। ভিড় এবং গরমে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েন।’’ প্রধানমন্ত্রী ‘এক্স হ্যান্ডল’-এ লেখেন, ‘‘রোমহর্ষক! এটাই একমাত্র শব্দ যা মালদার পরিস্থিতিকে বর্ণনা করতে পারে। ঝলসানো গরমও আমাদের প্রতি সমর্থন জানাতে আসা মানুষের ঢেউকে আটকাতে পারেনি। এই সমর্থন ও অনুরাগের জন্য জনসাধারণকে ধন্যবাদ এবং কথা দিচ্ছি যে, তাঁদের কল্যাণের জন্য আমরা সব সময় কাজ করে যাব।’’

    ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে নিত্যানন্দপুর মাঠেই সভা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সে সভাতেও ভাল ভিড় হয়েছিল। এ দিন মোদীর সভায় সে রেকর্ড ভেঙে গিয়েছেন বলে জানান বিজেপির নেতা, নেত্রীরা। বিজেপি সূত্রের দাবি, প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল এ দিন। বিজেপির উত্তর মালদহের সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, “পুলিশ ভিড় সামলাতে নয়, সভায় কর্মী, সমর্থকদের ভিড় ঠেকাতে বেশি ব্যস্ত ছিল। মানুষের উচ্ছ্বাস, উন্মাদনায় পুলিশ টিকতে পারেনি।” মন্তব্য করতে চাননি মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। পুলিশ সূত্রের দাবি, সভায় ভিড় হয়েছিল ৮০ হাজারের কাছাকাছি। সভাস্থলে হাজির এক পুলিশ কর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সভা চলাকালীনও গ্রাম-গঞ্জ থেকে প্রচুর মানুষ আসছিলেন। মাঠে সবাইকে নামতে দেওয়া হলে, পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)