• জেকে নগরের কারখানা নিয়ে প্রশ্নের মুখে সুরেন্দ্র
    আনন্দবাজার | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • তাঁর জন্মভূমি রানিগঞ্জের জেকেনগর, তাই এ বার এই এলাকায় দল তাঁকে প্রার্থী করায় কৃতজ্ঞ— আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি তাঁকে টিকিট দেওয়ার পরেই জানিয়েছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সেই জেকে নগরের অ্যালুমিনিয়াম কারখানার হাল নিয়ে প্রচারে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্মভূমির এলাকায় কারখানার বিষয়ে উদ্যোগী হননি সুরেন্দ্র। সুরেন্দ্রর দাবি, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দাবি জানার চেষ্টা করবেন।

    জেকে নগরে বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকা অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ১৯৭৩ সালে মালিকপক্ষ শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল। তার পরে ১৯৭৮ সালে রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় নতুন সংস্থা কারখানা চালানোর দায়িত্ব নেয়। ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণের পরে ভারত অ্যালুমনিয়াম কর্পরেশনের (বালকো) অধীনে চলে যায় কারখানা। ২০০০ সালের মার্চে কেন্দ্র কারখানার ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব বিলগ্নীকরণ করে। তা কিনে নেয় একটি বেসরকারি সংস্থা। ২০০০ সালের ১ মে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০২ সালের মধ্যে কারখানায় কর্মরত ৩২৬ জন কর্মীর বেশিরভাগকে ওই বেসরকারি সংস্থার অন্য ইউনিটে বদলি করা হয়। যারা যেতে চাননি, তাঁদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হয়।

    কারখানার পাঁচিলের ভিতরে সামগ্রী পাহারা দেওয়া ও কারখানা চত্বর সাফাই রাখার জন্য কয়েক জন অস্থায়ী কর্মী কাজ করছেন। বন্ধ কারখানার ইন-চার্জ প্রফুল্ল বর্মা জানান, কারখানা চত্বর দেখভালে তদারকি করা তাঁর কাজ। তিনি বলেন, “কারখানা চালু হবে শুনেছি। তবে কবে বলতে পারব না।” কর্মীদের অনেকে জানান, ২০০৭ সালে সংস্থা সমীক্ষা করে বছর দুয়েকের মধ্যে কারখানা চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা কার্যকর হয়নি। তবে কারখানার কর্মী আবাসন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি খুলে সংস্থার অন্য ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

    আইএনটিইউসি নেতা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, কারখানার নিজস্ব ২৭৩ একর জমি রয়েছে। ২৪ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। নতুন বেসরকারি সংস্থা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অ্যালুমুনিয়াম ফয়েল
    ও কেব্‌ল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও,
    তা হয়নি। সংগঠনের তরফে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ‘এডুকেশন হাব’ চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাকি পাঁচটি ইউনিট চালু করার আবেদন জানানো হয়। কোনওটিই হয়নি। তাঁর দাবি, রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারই কারখানার বিষয়ে উদাসীন।

    সিটুর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে জেকে নগর কারখানায় এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বিলগ্নীকরণের নামে কারখানা বন্ধ করে এলাকার অর্থনীতির সর্বনাশ করেছে। ২৪ বছর সাংসদ থাকলেও সুরেন্দ্র ফিরে তাকাননি। জেকে নগরকে জন্মভূমি দাবি করে এখন ভোটের বৈতরণী পার হতে চাইছেন।’’

    সুরেন্দ্রর বাবা ওই কারখানার কর্মী ছিলেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীও দাবি করেন, ‘‘সুরেন্দ্র এর আগে রাজ্যের দু’জায়গায় সাংসদ হয়ে শিল্পস্থাপন নয়, বন্ধ করার চেষ্টাই করেছেন। দুর্গাপুরে এএসপি বন্ধের চেষ্টা বাম-কংগ্রেসের আন্দোলনে আটকেছে। তিনি জেকে নগরের ভূমিপুত্র হলে তাঁর বাবার স্মৃতিবিজড়িত কারখানা নিয়ে খোঁজ নেননি কেন?’’ আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের বক্তব্য, ‘‘১৯৯৮ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন সুরেন্দ্র। তখন এক বার তিনি জেকে নগরে এসেছিলেন। আবার বিজেপি প্রার্থী হওয়ার পরে এখন তাঁর জেকে নগরের কথা মনে পড়েছে। তাঁর কথা এলাকাবাসীর কাছে প্রহসন।’’

    সুরেন্দ্র বলেন, ‘‘সারা আসানসোল জানে, আমি জেকে নগরের ছেলে। জেকে নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব, তাঁদের কাছে এর কী প্রভাব। তার পরেই যা বলার বলব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)