• কাউকে টাকা দেননি, ফাঁকা ওএমআরশিটও জমা দেননি, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েও চাকরিহারা, এ বার?
    আনন্দবাজার | ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • বাঁকা পথে চাকরি পাননি তাঁরা। ফাঁকা ওএমআর শিট জমা দিয়ে চাকরিতে বহাল হওয়া ‘শিক্ষক’দের তালিকাভুক্তও নন। নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন নিজের যোগ্যতায়। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে চাকরি-চ্যুতদের তালিকায় উঠে এসেছে এমন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নামও।

    অনিশ্চয়তা নিয়েই এ দিন হাই কোর্ট চত্বরে হাজির ছিলেন এমন বেশ কয়েক জন শিক্ষক। রায় শোনার পরে তাঁদের অনেকেরই দাবি, ‘আইনি পদক্ষেপ’ করার কথা ভাবছেন তাঁরা। ইলিয়াস বিশ্বাস তাঁদেরই এক জন। জানান, আদালতের নির্দেশেই বছরখানেক আগে, নিয়োগ হয়নি এমন কিছু পদে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা। ইলিয়াসের নিয়োগ হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুলে। বলেন, “এমন অন্তত ৬৫ জনের নিয়োগ হয়েছিল।”

    সোমবার, থেকে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। রবিবার রাতেই তাই কলকাতার ট্রেন ধরেছিলেন ইলিয়াস। রায় শোনার পরে বলেন, “নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে কি আবার ইন্টারভিউ দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে!” তালিকায় রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের বিবেকানন্দ জানা। তাঁর দাবি, “লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ নম্বরের মধ্যে ৪৭ পেয়েছিলাম। মৌখিকে প্রায় ১০। আমরা যাঁরা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলাম, তাঁরা তো এ রায়ে স্বাভাবিক কারণেই হতাশ।”

    হাই কোর্ট অবশ্য ওএমআর শিট-এর মান্যতা দিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির একটি স্কুলের ইংরেজির এক শিক্ষকের কথায়, “ওএমআর শিট দেখলেই বোঝা যাবে, আমি কতটা যোগ্য। পাঁচ বছর চাকরি করার পরে কলমের এক খোঁচায় অযোগ্য হয়ে গেলাম!” বর্ধমান শহরের একটি স্কুলের ভূগোলের এক শিক্ষকের কথাতেও একই আক্ষেপ, ‘মুড়ি-মুড়কির এক বিচার হয়ে গেল না! যোগ্যদেরও রাতারাতি অযোগ্যে পরিণত করাটা কি ঠিক হল!”

    এ দিনের রায়ে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের একাংশকে (যার মানদণ্ড আদালত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে) বেতন বাবদ প্রাপ্ত টাকা ১২ শতাংশ হারে সুদ সমেত ফিরিয়ে দিতে হবে। ইলিয়াসের প্রশ্ন, “যোগ্য বলে চাকরি পেলাম। নিয়ম মেনে বেতন পাচ্ছিলাম। যারা দালালের হাত ধরে চাকরি পেল, তাদের সঙ্গে একই বন্ধনীতে ফেলে দেওয়া হল আমাদের। এটা অমানবিক। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

    বীরভূমের রাজনগরের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি গিয়েছে ৩ জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষাকর্মীর। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উদ্বেগ, “কী করে স্কুল চলবে বলুন তো! স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩৩০ জন। প্রধান শিক্ষক-সহ অনুমোদিত পদ ২৩। এই মুহূর্তে আছেন ১৬ জন।”

    নিয়োগ-দুর্নীতি এবং তার জেরে চাকরি-চ্যুতির এই আবহে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, আট বছর আগে, ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কোন আইনে চাকরি-হারা হতে হবে!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)