• ভাবাদিঘিতে এসে বার্তা রেলের অফিসারদের বিজেপি ফায়দা তুলতে চাইছে, দাবি তৃণমূলের
    বর্তমান | ১৯ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: ভোটের ময়দানে হঠাৎ হাজির ভাবাদিঘি। আগামী ২০ মে আরামবাগে ভোটগ্রহণ। প্রচারের পারদ ক্রমেই চড়ছে। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার  গোঘাটের ভাবাদিঘি ও পশ্চিম অমরপুর এলাকা পরিদর্শনে আসেন বৃহস্পতিবার রেলদপ্তরের আধিকারিকরা। গ্রামবাসীদের কাছে তাঁরা প্রস্তাব দেন, ভাবাদিঘির যেটুকু অংশ নেওয়া হবে, তার থেকেও বেশি জলাভূমি তৈরি করে দেওয়া হবে। রেলদপ্তরের আচমকা এই পরিদর্শন ও প্রস্তাব নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, রেলকেও এবার সরাসরি ভোটের ময়দানে নামিয়ে দিল বিজেপি! ভাবাদিঘির ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে এখন ফায়দা লুটতে চাইছে তারা। 

    ভাবাদিঘির বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই দিঘি বাঁচানোর আন্দোলন করছেন। একদশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সমস্যার জট কাটেনি। হঠাৎ করে এদিন সকালে রেলদপ্তরের আধিকারিকরা ভাবাদিঘি গ্ৰামে আসেন।  গ্ৰামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই তাঁরা জট কাটাতে ওই বিকল্প প্রস্তাব দেন। সেইসঙ্গে সবুজ ধ্বংস হলে বনসৃজন করে দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন। প্রস্তাব শুনে বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আধিকারিকদের তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, পুরনো দাবি থেকে তাঁরা একচুলও সরবেন না। ‘দিঘি বাঁচাও’ কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, ‘তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপর পর্যন্ত প্রস্তাবিত ৮২.৪৭ কিমি রেলপথটির জরিপের কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয়। তখন দিঘির উত্তর পাড় দিয়েই রেল লাইন যাওয়ার জন্য সীমানা চিহ্নিত করা হয়। জমি অধিগ্রহণ চলাকালীন ২০০৮ সালে জানা যায়, দিঘির মাঝখান দিয়ে রেল লাইন করা হচ্ছে। এরপরেই আমরা আন্দোলনে নামি। রেলদপ্তরের আজকের দেওয়া প্রস্তাব আমরা মানছি না। আমাদের প্রস্তাব, আঠারো একরের পুরো দিঘি রেল নিয়ে নিক। তার বদলে গ্ৰামে সমপরিমাণ জায়গায় দিঘি বানিয়ে দেওয়া হোক।’ 

    রেলদপ্তরের আধিকারিকরা ভাবদিঘি হয়ে এদিন পশ্চিম অমরপুর এলাকায়ও যান। ‘রেল চালাও গ্ৰাম বাঁচাও’ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। জল নিকাশি ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা হয়। সংগঠনের সদস্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওঁদের বলেছি, রেল লাইন হোক। কিন্তু এলাকায় জল নিকাশের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এখনও যে জট রয়েছে, তার সমাধান করতে হবে। দাবি যথাযথ পূরণ হলে রেল লাইন তৈরিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’ 

    পরিদর্শনে আসা রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মনোজ খাঁ বলেন, ‘জেলা প্রশাসনকেও আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, দিঘির যে অংশটুকু নেওয়া হবে তার চেয়ে বেশি জলাভূমি তৈরি করে দেওয়া হবে। গাছ কাটা হলে বনদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে গাছ লাগানো হবে। অমরপুরের জল নিকাশি নিয়ে জট রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সেটাও কেটে যাবে। সমস্যার সমাধান হলে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হবে।’ তবে, রেলদপ্তরের আধিকারিকদের হটাৎ তৎপরতা নিয়ে মহকুমার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব ভোটের সময় রেল দপ্তরের অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তারকেশ্বর বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক স্বার্থে বারবার সেই কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় ভাবাদিঘি ইস্যুকে জাগিয়ে বিজেপি ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ একে মেনে নেবে না।’ বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘ রেল দপ্তরের আধিকারিকরদের আসার সঙ্গে বিজেপির কোন যোগ নেই।’ 

    আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলছেন রেলের আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)