• ‘উত্তম-মধ্যম দিন, অশান্তি উস্কে বিতর্কে অভিজিৎ
    বর্তমান | ১৯ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রতিরোধের নামে এবার উত্তম-মধ্যম দাওয়াইয়ের নিদান দিলেন তমলুক লোকসভার বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রামনবমী উপলক্ষ্যে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের কেন্দামারিতে প্রকাশ্য সভায় তাঁর এই বক্তব্য সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। একজন প্রাক্তন বিচারপতি শেষ পর্যন্ত আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলছেন? বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে ওই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য ও সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এনিয়ে সরব হন। কখনও নিজেকে চন্দ্রবোড়া আবার কখনও তৃণমূল কংগ্রেসকে চোর, ছ্যাঁচড়ের দল বলে আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এবার তমলুক লোকসভার বিজেপি প্রার্থীর উত্তম-মধ্যম দাওয়াই ভোটের রাজনীতিতে আরও একবার বিতর্ক উস্কে দিল।

    ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের এই কেন্দামারি-জালপাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি কর্মীদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট এবং হামলার অভিযোগ উঠেছিল। ভোট পরবর্তী সেই মামলা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। বুধবার কেন্দামারি উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে রামনবমীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যান। এছাড়াও তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী, বিজেপির লোকসভার ইনচার্জ অনুপম মল্লিক এবং সাহেব দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ টেনে রামনবমীর ওই সভায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। তাতে দুর্বৃত্তরা ভয়ে পালাবে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা আদালতে চলছে। আশা করব, ভোট পরবর্তী হিংসায় যেসব দুর্বৃত্ত চিহ্নিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদেশ হবে। তার আগে আপনারা এদের বিচার করুন। এই দলটাকে ছুড়ে কাছাকাছি নদী বা সমুদ্রে ফেলে দিন। 

    সুর চড়িয়ে তমলুক লোকসভার বিজেপি প্রার্থী আরও বলেন, প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ জেগে উঠেছেন। দুর্নীতি, তোলাবাজি, দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ জেগে উঠেছেন। মানুষের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। সেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষ যদি উত্তম-মধ্যম দেন, তাহলে তাতে কোনও দোষ হবে না। কারণ, আত্মরক্ষার অধিকার আইনে স্বীকৃত। আইপিসিতে ‘রাইট টু প্রাইভেট ডিফেন্সে’র কথা বলা আছে। আপনারা রুখে দাঁড়ান। দুর্বৃত্তদের শায়েস্তা করুন।

    অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই বক্তব্য সামনে আসতেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তমলুক লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, অভিজিৎবাবু একসময় বিচারপতি ছিলেন। গোটা সিস্টেম যাতে আইনের পথে চলে, সেই কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেই ব্যক্তি আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলছেন। তিনি উত্তম মধ্যম দেওয়ার কথা বলছেন। এতে কোনও দোষ নেই। কারণ ওই ব্যক্তি গান্ধীজি ও গডসের মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে সময় নেন। তাঁর কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। একজন প্রাক্তন বিচারপতি হিংসার দিকে যেতেও পিছপা হচ্ছেন না। এটাই সবচেয়ে খারাপ লাগছে।তমলুকের সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আত্মরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের আছে। এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। যে বা যারা তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডার তলায় সিপিএমকে খেদিয়ে এখন বিজেপির ঝান্ডার তলায় রয়েছে, তারাও আক্রমণ করতে এলে একই নিয়ম প্রযোজ্য। ‘অধিকারী বাবু’রা ২০০৮ সাল থেকে দুই মেদিনীপুরের সাধারণ মানুষের হাড় জ্বালিয়ে খেয়েছেন। তাঁরা আজকে এসব নিয়ে গালগল্প দিচ্ছেন। 

     নন্দীগ্রামে রামনবমীর দিনে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)