বাংলা কবিতা

  • মৌলিক নিষাদ
    - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
  • পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর নদীর ঠিক পাশে

    দাঁড়িয়ে রয়েছি। পিতামহ,

    দাঁড়িয়ে রয়েছি, আর চেয়ে দেখছি রাত্রির আকাশে

    ওঠেনি একটিও তারা আজ।

    পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর মৃত্যুর কাছাকাছি

    নিয়েছি আশ্রয়। আমি ভিতরে বাহিরে

    যেদিকে তাকাই, আমি স্বদেশে বিদেশে

    যেখানে তাকাই – শুধু অন্ধকার, শুধু অন্ধকার।

    পিতামহ, আমি এক নিষ্ঠুর সময়ে বেঁচে আছি।


    এই এক আশ্চর্য সময়।

    যখন আশ্চর্য বলে কোনো কিছু নেই।

    যখন নদীতে জল আছে কি না-আছে

    কেউ তা জানে না।

    যখন পাহাড়ে মেঘ আছে কি না-আছে

    কেউ তা জানে না।

    পিতামহ, আমি এক আশ্চর্য সময়ে বেঁচে আছি।

    যখন আকাশে আলো নেই,

    যখন মাটিতে আলো নেই,

    যখন সন্দেহ জাগে, যাবতীয় আলোকিত ইচ্ছার উপরে

    রেখেছে নিষ্ঠুর হাত পৃথিবীর মৌলিক নিষাদ–ভয়।


    পিতামহ, তোমার আকাশ

    নীল – কতখানি নীল ছিল?

    আমার আকাশ নীল নয়।

    পিতামহ, তোমার হৃদয়

    নীল – কতখানি নীল ছিল?

    আমার হৃদয় নীল নয়।

    আকাশের, হৃদয়ের যাবতীয় বিখ্যাত নীলিমা

    আপাতত কোনো-এক স্থির অন্ধকারে শুয়ে আছে।


    পিতামহ, আমি সেই ভয়ের দরুণ অন্ধকারে

    দাঁড়িয়ে রয়েছি! পিতামহ,

    দাঁড়িয়ে রয়েছি, আর চেয়ে দেখেছি, রাত্রির আকাশে

    ওঠেনি একটাও তারা আজ।

    মনে হয়, আমি এক অমোঘ মৃত্যুর কাছাকাছি

    নিয়েছি আশ্রয়। আমি ভিতরে বাহিরে

    যেদিকে তাকাই, আমি স্বদেশে বিদেশে

    যেখানে তাকাই – শুধু অন্ধকার, শুধু অন্ধকার

    অন্ধকারে জেগে আছে মৌলিক নিষাদ–এই ভয়